প্রতিনিয়ত জীবনযাপনের মধ্যদিয়ে, ঘরের দুয়ার খুলে শিশিরবিন্দুই মাঝে মাঝে দেখা হয় না। আজ থেকে বছর তিনেক আগে এরকম ছিলাম না। খুব অনুসন্ধিৎসু চোখ নিয়ে পারিপার্শ্বিক দেখতাম। গতকাল গোধূলীবেলায় বাসায় আসবার সময় আবিষ্কার করলাম বসন্ত এসে গেছে, বাহারী রং আর অনাঘ্রাতা যৌবন নিয়ে। আমার বাসায় ঢুকবার পথের একপাশে পুরোটাই জঙ্গল । রাতে মাঝে মাঝে বিভিন্ন বন্য প্রানী দেখা যায়। এখানে রাস্তায় কার এক্সিডেন্টের মূল কারণ হচ্ছে রাতের বেলা জগিং-এ বেরোনো হরিণ। গাছের দিকে তাকিয়ে খুব অবাক হয়েছি, ঠিক কখন যেন আমার অজান্তে গাছের পাতা ঝকঝকে সবুজ হয়ে গেছে। ফুলের রং হার মানায়, আমার স্বপ্নের পরিধিকেও।
একসময় গ্রামের বাড়ীতে গিয়ে আমার প্রধান শখ ছিল বড়শী দিয়ে মাছ ধরা, বাম কাঁধের উপর জাল নিয়ে ছুড়ে মারার সেই আনন্দ এখনো অনুভব করি। অথচ এখানে ঘরের পাশের নদীতে গিয়ে একটিবারো মাছ ধরা হলো না। মাঝে মাঝে রাতে নদী ভ্রমণে যাওয়া হয়। ছোট্ট কিন্তু বর্ধনশীল শহরের এই নদীবিহার কতদিন থাকবে কে জানে। রাতের বেলা নদীর পাশে গিয়ে বুঝবার চেষ্টা করি, কোনো তাল-লয় আছে কিনা, স্রোতের। খরস্রোতা নদীর, পাথরে তীব্র আছড়ে পড়ার শব্দে আটকা পড়ি সাময়িক। আবারো বুঝতে পারি, অনেক শিশিরবিন্দুই দেখা হচ্ছে না।
অযথা অকারণ বসে আছি, একটা যন্ত্রের সামনে। যার সাথে আমার যোগাযোগের মাধ্যম বলতে কয়েকটা বর্ণ । এধরণের একটা বোধহীন যন্ত্রের সামনে বসে নির্বোধের মত, সিনথেসাইজড সংগীত শুনে যাচ্ছি। ডেস্কটপে স্মোকি মাঊন্টেনের একটা পূর্ণ বসন্তের ছবি দিয়ে অবদমিত প্রণোদনাকে ডিজিটাল ম্যারিনেড করছি। এরপরেও সংগীতের স্বাদ আহরণ করি, মোঁপাসার 'নেকলেস' এর কথা ভাবি, এরপরে কিভাবে যেন নিজেকে ডিজিটাল মাংকি হওয়া থেকে রক্ষা করি। এই গানটা শুনছিলাম, আরমীন মুসার গলায়। সিনথেসাইজার ছাড়া মেয়েটার কোন গান শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে।
*২৮শে মার্চ, ২০০৭ এ লেখা হয়েছিল। সামহোয়্যারইনব্লগে প্রথম প্রকাশ।